আমরা জানি, পদার্থের প্রকৃতি, ধর্ম এবং তাদের পরিবর্তন রসায়ন পাঠের মূল বিষয়। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পদার্থ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ভিন্ন অবস্থায় পরিণত হওয়াকে ভৌত পরিবর্তন এবং সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হওয়াকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। এই পরিবর্তনগুলো ঘটে নানা ধরনের ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে। এই অধ্যায়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রকারভেদ, রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লবণ + গ্যাস
স্পর্শ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সালফিউরিক এসিড প্রস্তুত করা হয়। এই পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সালফার ডাইঅক্সাইডের জারণ।
তাপ
লবণ + গ্যাস
আমরা সব সময় আমাদের চারপাশের নানা পদার্থ তাপ, চাপ কিংবা একে অন্যের সংস্পর্শে এসে পরিবর্তিত হতে দেখি। পদার্থের দুই ধরনের পরিবর্তন হয়—কখনো হয় ভৌত পরিবর্তন, কখনো বা রাসায়নিক পরিবর্তন।
7.1.1 ভৌত পরিবর্তন
প্রতিটি রাসায়নিক পদার্থ এক বা একাধিক মৌল দিয়ে গঠিত। যদি কোনো পদার্থের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক গঠনের কোনো পরিবর্তন না ঘটে শুধু বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তাকে ভৌত পরিবর্তন (Physical Change) বলে। যেমন—এক খণ্ড কঠিন বরফকে কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে দিলে তা পরিবেশ থেকে তাপ গ্রহণ করে আস্তে আস্তে গলে তরল পানিতে পরিণত হয়। আবার, তরল পানিকে তাপ প্রদান করে 100°C এ উন্নীত করলে সেটি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এখানে কঠিন বরফ, পানি এবং জলীয় বাষ্প এ তিনটি পদার্থের আণবিক সংকেত H2O। অর্থাৎ তরল পানি, কঠিন বরফ এবং গ্যাসীয় জলীয় বাষ্প তিনটিরই প্রতিটি অণুতে দুটি করে হাইড্রোজেন ও একটি করে অক্সিজেন পরমাণু থাকে। কাজেই তিনটি পদার্থ একই। শুধু এদের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে— বরফ কঠিন, পানি তরল এবং জলীয় বাষ্প গ্যাসীয়। এ ধরনের পরিবর্তনকে আমরা ভৌত পরিবর্তন বলব।
7.1.2 রাসায়নিক পরিবর্তন
কখনো কখনো দেখা যায় যেকোনো পদার্থের ব্যাহ্যিক তাপমাত্রা ও চাপের পরিবর্তন করলে কিংবা অন্য পদার্থের সংস্পর্শে আনলে তা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হয়। এ ধরনের পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন (Chemical Change) বলে। অর্থাৎ যে পরিবর্তনের ফলে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিণত হয় তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। রাসায়নিক পরিবর্তনে নতুন যে পদার্থ উৎপন্ন হয় তার অণুতে অবস্থিত মৌলগুলো পূর্বের পদার্থ থেকেই আসে। পূর্বের অণুর মধ্যে বন্ধনসমূহের ভাঙনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন আয়ন বা পরমাণুর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে আয়ন বা পরমাণুগুলোর মধ্যে নতুন বন্ধন গঠিত হয়ে নতুন অণুর সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এক কথায় পুরাতন বন্ধনের ভাঙন এবং নতুন বন্ধনের গঠনই মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়া বা রাসায়নিক পরিবর্তন। রান্নার কাজে আমরা যে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করি সে গ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন (CH4)। মিথেন গ্যাসকে অক্সিজেনে পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস, জলীয় বাষ্প এবং তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। এ ধরনের পরিবর্তনই রাসায়নিক পরিবর্তন।
CH4(g) + O2(g) CO2(g) + H2O(l)
একইভাবে, ক্যালসিয়াম কার্বনেট হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন করে৷ এটিও রাসায়নিক পরিবর্তন।
CaCO3 (s) CaCl2 (aq) + CO2 (g) + H2O (1) + 2HCl (aq)
রাসায়নিক বিক্রিয়াকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা যায়:
7.2.1 রাসায়নিক বিক্রিয়ার দিক
বিক্রিয়ার দিকের উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একমুখী বিক্রিয়া ও উভমুখী বিক্রিয়া৷
একমুখী বিক্রিয়া (Irreversible Reactions)
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থগুলো উৎপাদে পরিণত হয়, কিন্তু উৎপাদ পদার্থগুলো পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হয় না তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলা হয়। যেমন: তুমি যদি ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে একটি খোলা পাত্রে নিয়ে তাপ দাও তাহলে দেখবে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ভেঙে গিয়ে কঠিন চুন ও গ্যাসীয় কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হবে। গ্যাসীয় কার্বন ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া পাত্র থেকে অপসারিত হয় এ অবস্থায় কঠিন চুন পুনরায় ক্যালসিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয় না। সুতরাং এটি একটি একমুখী বিক্রিয়া। একমুখী বিক্রিয়ার সমীকরণে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মধ্যে একটি ডানমুখী তীর চিহ্ন (→ ) ব্যবহার করা হয়।
CaCO3 (s) CaO (s) + CO2(g)
উভমুখী বিক্রিয়া (Reversible Reactions )
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থ বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয় আবার উৎপাদ পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে পুনরায় বিক্রিয়ক পদার্থে পরিণত হয়। এই ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে৷ উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক হতে উৎপাদ হওয়ার বিক্রিয়াকে সম্মুখমুখী বিক্রিয়া এবং উৎপাদ হতে বিক্রিয়কে পরিণত হওয়ার বিক্রিয়াকে পশ্চাৎমুখী বা বিপরীতমুখী বিক্রিয়া বলা হয়। উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মধ্যে বিপরীতমুখী দুটি অর্ধ তীর চিহ্ন (=) ব্যবহার করে সমীকরণ উপস্থাপন করা হয়। যেমন: হাইড্রোক্লোরিক এসিডের উপস্থিতিতে ইথানল ও ইথানয়িক এসিড পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে ইথাইল ইথানয়েট এস্টার ও পানি উৎপন্ন করে। অপরদিকে, উৎপন্ন ইথাইল ইথানয়েট এস্টার ও পানি পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে ইথানল ও ইথানয়িক এসিড উৎপন্ন করে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন
ইতোপূর্বে তোমরা জেনেছো যে, তাপীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। তাপের শোষণ এবং তাপ উৎপন্ন হওয়ার উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইভাগে ভাগ করা যায় যথা: তাপোৎপাদী বিক্রিয়া এবং তাপহারী বিক্রিয়া।
তাপোৎপাদী বিক্রিয়া (Exothermic Reactions )
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হয় তাদের তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে। যেমন: হেবার প্রণালিতে 1 মোল নাইট্রোজেন ও 3 মোল হাইড্রোজেন হতে 2 মোল অ্যামোনিয়া উৎপাদনের সময় 92 কিলোজুল তাপ উৎপন্ন হয়।
তাপহারী বিক্রিয়া বা তাপশোষী বিক্রিয়া (Endothermic Reactions )
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির শোষণ ঘটে সেই রাসায়নিক বিক্রিয়াকে তাপহারী বিক্রিয়া বা তাপশোষী বিক্রিয়া বলে। যেমন- 1 মোল নাইট্রোজেন ও 1 মোল অক্সিজেন পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে 2 মোল নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হওয়ার সময় 180 kJ তাপ শোষিত হয়। এটি তাপশোষী বিক্রিয়া।
N2(g) + O2(g) + 180 kJ 2NO(g)
আমরা বিক্রিয়ায় তাপ AH ব্যবহার করেও লিখতে পারি। তাপশোষী বিক্রিয়ায় AH এর মান ধনাত্মক।
N2 (g) + O2(g) 2NO(g) ; AH = + 180 kJ
ইলেকট্রন স্থানান্তর
ইলেকট্রন স্থানান্তরের উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা: রেডক্স বিক্রিয়া এবং নন-রেডক্স বিক্রিয়া।
রেডক্স (Redox) বিক্রিয়া
Reduction (বিজারণ) শব্দের এর প্রথমাংশ Red এবং Oxidation জারণ শব্দের প্রথমাংশ ox এর সমন্বয়ে গঠিত শব্দ হলো Redox অর্থাৎ এর নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে রেডক্স (Redox) অর্থ জারণ-বিজারণ। জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কসমূহের মধ্যে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে। একটি বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং অপর বিক্রিয়কটি সেই ইলেকট্রনকে গ্রহণ করে। সুতরাং জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া দুটি অর্ধাংশে বিভক্ত। এক অর্ধাংশে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করে যাকে জারণ অর্ধবিক্রিয়া বলে। অপর অর্ধাংশে অন্য একটি বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে যাকে বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া বলে। উল্লেখ্য যে, জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় যে বিক্রিয়কটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে বিজারক পদার্থ বলা হয় এবং যে বিক্রিয়কটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক পদার্থ বলা হয়।
Na + 1/2Cl2 = NaCl
এই বিক্রিয়ায় Na ইলেকট্রন ত্যাগ করছে, সুতরাং Na বিজারক পদার্থ। অপরদিকে, cl ইলেকট্রন গ্রহণ করেছে তাই Cl জারক পদার্থ।
যে বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণুর ইলেকট্রনের দান ঘটে অর্থাৎ ঐ পরমাণুর ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বা ঋণাত্মক চার্জের সংখ্যা হ্রাস পায় সেই বিক্রিয়াকে জারণ বিক্রিয়া বলে ।
Fe2+ → Fe3+ + e- [জারণ বিক্রিয়া]
Na° → Na1+ + e- [জারণ বিক্রিয়া]
যে বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণুর ইলেকট্রনের গ্রহণ ঘটে অর্থাৎ ঐ পরমাণুর ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা হ্রাস পায় বা ঋণাত্মক চার্জের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় সেই বিক্রিয়াকে বিজারণ বিক্রিয়া বলে।
cl° + e- → cl1- [বিজারণ বিক্রিয়া]
Cu2+ + e → Cu1+ [বিজারণ বিক্রিয়া]
জারণ সংখ্যা: কোনো অণু বা যৌগমূলকের মধ্যে অবস্থিত পরমাণুগুলোর কোনোটি ইলেকট্রন ছেড়ে দেওয়ার আবার কোনোটি ইলেকট্রন গ্রহণ করার প্রবণতা দেখায়। অণু বা যৌগমূলকের মধ্যে অবস্থিত কোনো পরমাণুর ইলেকট্রন ছাড়ার প্রবণতাকে ধনাত্মক চিহ্নযুক্ত একটি সংখ্যা দিয়ে আর কোনো পরমাণুর ইলেকট্রন গ্রহণ করার প্রবণতাকে ঋণাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অণু বা যৌগমূলকের মধ্যে অবস্থিত কোনো পরমাণুর এই ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যাকেই তার জারণ সংখ্যা (Oxidation Number) বলে।
একক পরমাণু যেমন: Na, Mg, Fe ইত্যাদিতে সংশ্লিষ্ট পরমাণুসমূহের জারণ সংখ্যা শূন্য ধরা হয়। আবার, একই পরমাণু দিয়ে গঠিত অণু যেমন: H2, O2, N2, Cl2, Br2 ইত্যাদিতে সংশ্লিষ্ট পরমাণুসমূহের জারণ সংখ্যা শূন্য (০)।
FeSO4 অণুতে Fe এর জারণ সংখ্যা +2 আবার Fe ধাতুতে Fe এর জারণ সংখ্যা শূন্য। HCl এ Cl এর জারণ সংখ্যা -1 আবার Cl2 অণুতে এর জারণ সংখ্যা শূন্য (০)।
জারণ সংখ্যা নির্ণয়: একটি যৌগে কোনো একটি মৌলের জারণ সংখ্যা যৌগের অন্যান্য মৌলের জারণ সংখ্যার উপর নির্ভর করে। যৌগে কোনো একটি মৌলের জারণ সংখ্যা বের করার জন্য যৌগের অন্যান্য মৌলের জারণ সংখ্যা জানতে হয়৷
কোনো অণু বা আয়নে সংশ্লিষ্ট পরমাণুর জারণ সংখ্যা নিচের পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায় :
1. যৌগ বা আয়নে অবস্থিত যে পরমাণুটির জারণ সংখ্যা বের করতে হবে ধরে নেই তার জারণ সংখ্যা x ।
2. যৌগ বা আয়নের সকল মৌলের জারণ সংখ্যাকে তাদের নিজ নিজ পরমাণু সংখ্যা দ্বারা গুণ করে তাদের সমষ্টি বের করতে হবে।
3. জারণ সংখ্যার সমষ্টি হবে অণুর ক্ষেত্রে শূন্য (0) এবং আয়নের ক্ষেত্রে তার চিহ্নসহ চার্জ সংখ্যার সমান। এখান থেকে পরমাণুর জারণ সংখ্যা x বের করা যাবে। যেমন: ধরা যাক KMnO4 অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণু Mn এর জারণ মান বের করতে হবে। ধরা যাক, Mn এর জারণ মান ধরো x,
K এর জারণ মান +1 এবং O এর জারণ মান -2 নিয়ে সকল মৌলের জারণ সংখাকে তাদের পরমাণু সংখ্যা দ্বারা গুণ করে যোগ করো। উত্ত যোগফল হবে KMnO, এর জারণ সংখ্যার সমান। KMnO, একটি আধান নিরপেক্ষ অণু, সুতরাং এর আধান শূন্য,
কাজেই (+1)x1 + xx1 + (-2)x4 = 0
বা x - 7
অর্থাৎ Mn এর জারণ সংখ্যা +7
জারণ সংখ্যা এবং যোজনী একই বিষয় নয়, জারণ সংখ্যা হলো পরমাণু বা আয়নে উপস্থিত চার্জ সংখ্যা (চিহ্নসহ)। এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক, পূর্ণসংখ্যা, শূন্য এমন কি ভগ্নাংশও হতে পারে। শুধু ভাই নয়, একই মৌলের জারণ সংখ্যা বিভিন্ন যৌগে বিভিন্ন হতে দেখা যায়। অন্যদিকে যোজনী হলো একটি মৌল অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার সামর্থ্য। যোজনী ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হয় না, এটি সর্বদাই পূর্ণসংখ্যা হয়৷ শুধু নিস্ক্রিয় গ্যাসের যোজনী শূন্য হয়।
জারণ-বিজারণ একটি যুগপৎ ক্রিয়া
তোমরা জানো, যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের দান ঘটে তাকে জারণ বিক্রিয়া এবং যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের গ্রহণ ঘটে তাকে বিজারণ বিক্রিয়া বলা হয়। আবার, যে পদার্থ ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাদেরকে বিজারক এবং যে পদার্থ ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাদেরকে জারক পদার্থ বলে। জারণ- বিজারণ বিক্রিয়া একই সাথে সংঘটিত হয় |
আমরা নিচের বিক্রিয়াটি বিবেচনা করতে পারি৷
Na + 1/2Cl2 NaCl
এখানে বিজারক পদার্থ Na তার বাইরের শেলের 1টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারণ অর্ধবিক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। অপরদিকে বিজারক Na যে ইলেকট্রন ত্যাগ করেছে, জারক পদার্থ Cl সেই ইলেকট্রনকে গ্রহণ করে বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
জারণ অর্ধবিক্রিয়া Na° → Na+ + e-
বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া cl° + e → cl
এই দুই অর্ধ-বিক্রিয়াকে যোগ করলে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া পাওয়া যায়।
জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া: Na° + Cl° Na+ + Cl- = NaCl
এখানে স্পষ্টত জারণে বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন ত্যাগ করেছে, অপরদিকে বিজারণে জারক পদার্থ ঐ ইলেকট্রন গ্রহণ করেছে। যদি জারক পদার্থ Cl ইলেকট্রন গ্রহণ না করতো তাহলে বিজারক পদার্থ Na ইলেকট্রন দান করতে পারত না। কাজেই বলা যায় জারণ যখনই ঘটবে সাথে সাথে সেখানে বিজারণও ঘটবে। অর্থাৎ জারণ-বিজারণ একটি যুগপৎ প্রক্রিয়া (Simultaneous Process)।
যেহেতু বিজারক ইলেকট্রন দান করে এবং জারক উক্ত ইলেকট্রন গ্রহণ করে কাজেই বলা যায় জারণ- বিজারণ বিক্রিয়া মানেই ইলেকট্রন স্থানান্তর প্রক্রিয়া।
বেশ কিছু বিক্রিয়া আছে যেখানে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া ঘটে। সেগুলো হচ্ছে:
1. সংযোজন বিক্রিয়া
2. বিয়োজন বিক্রিয়া
3. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
4. দহন বিক্রিয়া
1. সংযোজন বিক্রিয়া (Addition Reaction): যে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক রাসায়নিক পদার্থ পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটিমাত্র উৎপাদ উৎপন্ন করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমন: ফেরাস ক্লোরাইডের সাথে ক্লোরিন যুক্ত হয়ে ফেরিক ক্লোরাইড উৎপন্ন করে।
হাইড্রোজেন গ্যাস নাইট্রোজেন গ্যাসের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে। এটিও সংযোজন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
তবে যেসব সংযোজন বিক্রিয়ায় শুধু মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে, তাদেরকে সংশ্লেষণ বিক্রিয়াও বলে। সুতরাং অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করার বিক্রিয়াটি একাধারে সংযোজন বা সংশ্লেষণ বিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত।
2. বিয়োজন বিক্রিয়া (Decomposition Reaction): যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙে একাধিক যৌগ বা মৌলে পরিণত হয় তাকে বিয়োজন বিক্রিয়া বলা হয়। যেমন: ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইডকে তাপ দিলে তা বিয়োজিত হয়ে ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড ও ক্লোরিন উৎপন্ন করে। এটি বিয়োজন বিক্রিয়া৷
আবার, পানিকে তড়িৎবিশ্লেষণ করলে একটি অণু ভেঙে দুটি অণুতে পরিণত হয়। অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস ও ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এটিও বিয়োজন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
3. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (Substitution or Displacement Reaction): কোনো অধিক সক্রিয় মৌল বা যৌগমূলক অপর কোনো কম সক্রিয় মৌল বা যৌগমূলককে প্রতিস্থাপন করে নতুন যৌগ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে। যেমন: জিংক ধাতু সালফিউরিক এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপিত করে জিংক সালফেট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার উদাহারণ ।
4. দহন বিক্রিয়া (Combustion Reaction): কোনো মৌল বা যৌগকে বাতাসের অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ভার উপাদান মৌলের অক্সাইডে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে দহন বিক্রিয়া বলে। দহন বিক্রিয়ায় সব সময় তাপ উৎপন্ন হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন এর আদান-প্রদান ঘটে। যেমন: প্রাকৃতিক গ্যাস বা মিথেন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ায় করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন করে। এটি দহন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
একইভাবে S, C, Mg ও H2 কে দহন করলে তাদের অক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং তাপ উৎপন্ন হয়।
দহন বিক্রিয়ার প্রতিক্ষেত্রেই অক্সিজেন ইলেকট্রন গ্রহণ করে অপর যৌগ বা মৌল ইলেকট্রন ত্যাগ করে। সুতরাং দহন বিক্রিয়া জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
নন-রেডক্স (Non Redox ) বিক্রিয়া
এমন অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখা যায় যেখানে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে না। এ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে নন-রেডক্স বিক্রিয়া বলে। এ ধরনের বিক্রিয়ায় যেহেতু ইলেকট্রনের আদান- প্রদান ঘটে না সুতরাং বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণুর জারণ সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে না। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার নন-রেডক্স বিক্রিয়া দেখানো হলো যেমন: (1) প্রশমন বিক্রিয়া (2) অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া ইত্যাদি।
1. প্রশমন বিক্রিয়া (Neutralization Reaction): একটি এসিড ও একটি ক্ষার পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়ে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়াকে প্রশমন বিক্রিয়া বলা হয়৷ এ ধরনের বিক্রিয়াকে এসিড-ক্ষার বিক্রিয়াও বলা হয়। যেমন: HCl NaOH পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে Nacl লবণ ও পানি উৎপন্ন করে৷ এটি একটি প্রশমন বিক্রিয়া৷ একে এভাবে দেখানো যায়:
HCl(aq) + NaOH (aq) NaCl (aq) + H2O (1)
প্রশমন বিক্রিয়ায় সর্বদাই তাপ উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ প্রশমন বিক্রিরা তাপোৎপাদী বিক্রিয়া এবং এসিড ও ক্ষার উভয়ই তীব্র হলে এই তাপের মান হয় AH 57.34 kJ । প্রশমন বিক্রিয়ায় এসিড হাইড্রোজেন আয়ন (H+) সরবরাহ করে এবং ক্ষার হাইড্রোক্সাইড আরন (OH) সরবরাহ করে । এরপর উক্ত আয়ন দুটি পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে পানি উৎপন্ন করে। Nacl জলীয় দ্রবণে Na এবং Cl- আয়ন হিসেবে থাকে।
প্রশমন বিক্রিয়া বলতে আমরা H+ আয়ন ও OH আয়নের সহযোগে পানি উৎপন্ন করার বিক্রিয়াকে বুঝে থাকি।
আবার, এসিড হিসেবে আমরা যেকোনো তীব্র এসিড নিই না কেন প্রতি ক্ষেত্রে সে হাইড্রোজেন আয়ন H+ সরবারাহ করবে এবং ক্ষার হিসেবে যেকোনো তীব্র ক্ষার নিলে সেটি হাইড্রোক্সাইড OH সরবরাহ করবে। অতঃপর এরা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে পানি উৎপন্ন করবে। 1 মোল পানি উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তাকে প্রশমন তাপ বলে। হিসাব করে দেখা গেছে 1 মোল পানি উৎপন্ন করার জন্য 57.34 kJ তাপ উৎপন্ন হয়।
2. অবক্ষেপণ বিক্রি ( Precipitation Reaction): একই দ্রাবকে দুটি যৌগ মিশ্রিত করলে তারা পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে যে উৎপাদগুলো উৎপন্ন করে তাদের মধ্যে কোনোটি যদি ঐ দ্রাবকে অদ্রবণীয় বা খুবই কম পরিমাণে প্রবণীয় হয় তবে তা বিক্রিয়া পাত্রের তলার কঠিন অবস্থায় তলানি হিসেবে জমা হয়৷ এ তলানিকে অধঃক্ষেপ (precipitate) বলে। যে বিক্রিয়ার প্রবণীয় বিক্রিয়ক পদার্থ বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় কঠিন উৎপাদে পরিণত হয় তাকে অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া বলে৷
যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) জলীয় দ্রবণের মধ্যে সিলভার নাইট্রেট (AgNO3) জলীয় দ্রবণ যোগ করলে তাদের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে, ফলে সিলভার ক্লোরাইড (AgCl) এবং সোডিয়াম নাইট্রেট (NaNO3) উৎপন্ন হয়। পানিতে NaNO, এর দ্রবণীয়তা বেশি। তাই NaNO, পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। কিন্তু পানিতে AgCl এর প্রবণীয়তা অত্যন্ত কম বলে তা বিক্রিয়ার পর পাত্রের তলার অধঃক্ষেপ হিসেবে জমা হয়।
NaCl (aq) + AgNO3, (aq) AgCl(s) + NaNO3 (aq)
কিছু কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো Redox এবং Non-Redox শ্রেণিবিভাগ এর মধ্যে পড়ে না। নিচে কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া আলোচনা করা হলো।
আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়া বা পানি বিশ্লেষণ (Hydrolysis) বিক্রিয়া
কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক হিসেবে পানি অন্য কোনো যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে উৎপাদ উৎপন্ন করলে তাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বা পানি বিশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে।
যেমন: SiCl4 + H2O Si(OH)4 + 4HCl
এখানে SiCl4 এবং H2O বিক্রিয়া করছে। অতএব, এটি আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়া। আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়ায় অনেক সময় অস্বচ্ছ দ্রবণীয় যৌগ উৎপন্ন করে। সেক্ষেত্রে বিক্রিয়াটি অধঃক্ষেপণ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। নিম্নের বিক্রিয়াকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়াও বলা যায় আবার অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়াও বলা যায়।
যেমন:
AlCl3(s) + 3H2O (1) → Al(OH),(s) + 3HCl(aq)
এখানে, Al(OH)3, পানিতে অদ্রবণীয়।
পানিযোজন (Hydration) বিক্রিয়া
অনেক সময় দেখা যায়, আয়নিক যৌগগুলো কেলাস বা স্ফটিক গঠনের জন্য এক বা একাধিক পানির অণুর সাথে যুক্ত হয়। এ ধরনের বিক্রিয়াকে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে। যৌগগুলোর সাথে যে কয়টি পানির অণু যুক্ত হয় তাদেরকে কেলাস পানি বলে। যেমন: কপার সালফেট (CuSO4) এর সাথে 5 অণু পানি (5H2O) যুক্ত হয়ে পেন্টা হাইড্রেট কপার সালফেট (CuSO4.5H2O) উৎপন্ন হয়।
CuSO4 + 5H2O CuSO4.5H2O (পেন্টা হাইড্রেট কপার সালফেট)
পানিযোজন বিক্রিয়া মূলত সংযোজন বিক্রিয়ার মতো। তবে সংযোজন বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের আদান- প্রদান ঘটে কিন্তু পানিযোজনে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে না৷
সমানুকরণ (Isomerisation) বিক্রিয়া: যদি দুটি যৌগের আণবিক সংকেত একই থাকে কিন্তু গাঠনিক সংকেত ভিন্ন হয় তবে তাদেরকে পরস্পরের সমানু বলা হয়। একটি সমানু থেকে অপর একটি সমানু তৈরির প্রক্রিয়াকে সমানুকরণ বিক্রিয়া বলে৷ যেমন, H4N2CO আণবিক সংকেত দ্বারা ভিন্ন গাঠনিক সংকেত বিশিষ্ট দুটি যৌগকে প্রকাশ করা হয়। যৌগ দুটি হলো: NH4CNO (অ্যামোনিয়াম সায়ানেট) ও ইউরিয়া (H2N-CO-NH2)। এরা পরস্পরের সমানু। অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে তাপ দিলে তা ইউরিয়াতে পরিণত হয়।
তাপ
NH4CNO H2N-CO-NH2
পলিমারকরণ (Polymerization) বিক্রিয়া
প্রভাবক, উচ্চ চাপ ও তাপের প্রভাবে যখন এক বা একাধিক যৌগের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বৃহদাকার অণু তৈরি করে তখন তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে বৃহদাকার অণুটিকে পলিমার অণু এবং ক্ষুদ্র অণুটিকে মনোমার অণু বলা হয়। যে বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার উৎপন্ন হয় তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। 1200 atm চাপে 200 °C তাপমাত্রায় ও O2 প্রভাবকের উপস্থিতিতে ইথিলিনের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু যুক্ত হয়ে বৃহৎ পলিমার অণু পলিথিন উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়া হচ্ছে ইথিলিনের পলিমারকরণ বিক্রিয়া। এখানে ইথিলিন মনোমার এবং পলিথিন পলিমার অণু হিসেবে বিবেচিত। এখানে n দ্বারা ইথিলিনের অসংখ্য অণুর সংখ্যা বোঝায়।
O2
n(CH2=CH2) ইথিলিন (-CH2-CH2-)n পলিথিন
200°C, 1200 atm
বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়া
আমরা প্রতিদিন অনেক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করি যেগুলোতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে ঘটে থাকে। যেমন:
1. লোহায় মরিচা পড়া
আমরা লোহার (আয়রন বা Fe) তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন: ছুরি, কাঁচি, বঁটি, দা ইত্যাদি ব্যবহার করি। এসব যন্ত্রপাতি বাতাসে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে এদের পৃষ্ঠে মরিচা পড়ে। এখানে আয়রন বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে আর্দ্র ফেরিক অক্সাইড বা মরিচা তৈরি করে। এতে ধাতুর পৃষ্ঠতল ক্ষয় হয়। মরিচা ঝাঁঝরা জাতীয় পদার্থ হওয়ায় এর ভিতর দিয়ে বাতাসের অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প ঢুকে লোহার পৃষ্ঠকে ক্রমাগত ক্ষয় করতে থাকে। এভাবে লোহার তৈরি পুরো জিনিসটিই এক সময় নষ্ট হয়ে যায়।
2Fe + 1.502 + 3H2O 2Fe (OH)3
2Fe(OH)3 Fe2O3 nH2O মরিচা
মরিচায় পানির অণুর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সুতরাং মরিচার রাসায়নিক সংকেত Fe2O3.nH2On এর মান 1, 2, 3 ইত্যাদি যেকোনো পূর্ণ সংখ্যা হতে পারে।
2. তামা (Cu) ও অ্যালুমিনিয়াম (Al) এর ক্ষয়রোধ লোহার তৈরি দ্রব্যাদি ছাড়াও আমরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে কপার-আলুমিনিয়াম এর দ্রব্যাদি ব্যবহার করে থাকি। Cu ও Al এর দ্রব্যাদির বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে প্রথমে তাদের উপর CuO ও Al2O3 এর একটি আস্তরণ পড়ে। পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেন উক্ত আস্তরণ ভেদ করে আর Cu বা Al সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলে আর বিক্রিয়া সাধিত হয় না। সুতরাং Cu বা Al এর ক্ষয় সাধিত হয় না। এরূপে CuO ও Al2O3 যথাক্রমে Cu ও Al কে রক্ষা করে।
3. পিঁপড়া বা মৌমাছির কামড়ের জ্বালা নিরাময় পিঁপড়া বা মৌমাছি কামড়ালে ক্ষতস্থানে জ্বালা যন্ত্রণা করে৷ এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমরা ক্ষতস্থানে চুন লাগাই। এর কারণ কী? পিঁপড়ার মুখ বা মৌমাছির হুলে এক ধরনের এসিড থাকে যেটি জ্বালা-যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। ক্ষতস্থানে চুন (ক্ষারক) যোগ করার ফলে এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে সেটি প্রশমিত হয়। ফলে জ্বালা-যন্ত্রণা বন্ধ হয়ে যায়।
4. শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে শ্বসন প্রক্রিয়া সাধিত হয়। শ্বসনে মূলত গ্লুকোজ (C6H12O6) অণু অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে (O2 এর সাথে বিক্রিয়া করে
কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), পানি (H2O) ও শক্তি উৎপন্ন করে।
C6H12O6 + 602 6CO2 + 6H2O + শক্তি
মানুষের শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অনেকের পাকস্থলীতে অতিরিক্ত HCl তৈরি হয়। অতিরিক্ত HCl কে প্রশমিত করার জন্য রোগীকে ডাক্তার এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেতে বলেন। এন্টাসিড হলো Mg(OH)2 ও Al(OH)3 এর মিশ্রণ। এই ক্ষারক দুটি অতিরিক্ত HCl কে প্রশমিত করে এবং রোগী এসিডিটি থেকে মুক্তি পান। এন্টাসিডের বিক্রিয়া এরকম:
2HCl + Mg(OH)2 MgCl2 + 2H2O
3HCl + Al(OH)3→ AlCl3 + 3H2O
5. জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস
প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসে বেশির ভাগই মিথেন থাকে। মিথেন গ্যাসকে অক্সিজেনে পোড়ালে CO2 এবং জলীয় বাষ্প ও তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। CNG, ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন, অকটেন ইত্যাদি জ্বালানিকে পোড়ালেও একইভাবে CO2 এবং জলীয়বাষ্প ও তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।
CH 4 + 202 CO2 + 2H2O + শক্তি
বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত কতিপয় ক্ষতিকর বিক্রিয়া রোধ করার উপায়
আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই প্রতিনিয়ত রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে কিংবা নষ্ট হচ্ছে। আমরা আমাদের রসায়নের জ্ঞান ব্যবহার করে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কিছু রক্ষা করতে পারি। যেমন:
(i) মরিচার ক্ষয় থেকে আয়রনকে রক্ষার জন্য লোহার তৈরি দ্রব্যাদির উপর রং দিলে সেটি আর বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে না, ফলে মরিচা পড়তে পারে না। তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লোহার তৈরি দ্রব্যের উপর লোহা অপেক্ষা কম সক্রিয় অপর একটি ধাতুর প্রলেপ দিয়ে ইলেকট্রোপ্লেটিং করে লোহার তৈরি দ্রব্যাদিকে মরিচার হাত হতে রক্ষা করা যায়। কোনো ধাতুর উপর জিংকের প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজিং এবং টিনের প্রলেপ দেওয়াকে টিন প্লেটিং বলে।
তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি ধাতুর উপর অন্য একটি ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার প্রক্রিয়াগুলোকে ইলেকট্রোপ্লেটিং বলে৷ এভাবে ধাতব পৃষ্ঠকে রক্ষা করা যায়।
(ii) বর্ষাকালে ছাদ বা বাড়ির আঙিনা পিচ্ছিল হয়। তখন আমরা বালি ফেলে দিয়ে পিচ্ছিলতা কমানোর চেষ্টা করি। ছাদ বা আধিনাকে পিচ্ছিল করে ক্ষার জাতীয় পদার্থ। সুতরাং এ ক্ষারকে প্রশমিত করার জন্য এসিড জাতীয় পদার্থ যোগ করতে হবে। বালু (SiO2) অম্লধর্মী। তাই বালু যোগ করার ফলে অম্ল- ক্ষার প্রশমন বিক্রিয়ার মাধ্যমে পিচ্ছিলতা দূর হয়।
(iii) সেলাই করার সুচকে নারিকেল তেলের ভিতর ডুবিয়ে রাখা হয়। কারণ সুচ যাতে বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ক্ষয় না হয়। এভাবে লোহার তৈরি সুচে মরিচা পড়া রোধ করা যায়।
আমরা জানি, সকল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থ উৎপাদে পরিণত হয়। কোনো কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হতে 1 সেকেন্ডের কম সময় লাগে। আবার, কোনো কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হতে অনেক বেশি সময় লাগে।
একক সময়ে যে পরিমাণ বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হয় তাকে বিক্রিয়ার হার বলে।
যেমন: Nacl কৰণে AgNO3, যোগ করার পর 1 সেকেন্ডের কম সময়ে AgCl এর সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে। আবার, লোহার তৈরি একটি ব্রিজে মরিচা পড়তে অনেক দিন সময় লাগে।
বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিভিন্ন সময় নেয়। যে বিক্রিয়া অল্প সময়ে সংঘটিত হয় সে বিক্রিয়ার গতিবেগ বা হার বেশি, আবার যে বিক্রিয়ায় অনেক বেশি সময়ে সংঘটিত হয় সে বিক্রিয়ার গতিবেগ বা হার কম।
আমরা জানি, উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থগুলো পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয়, এই বিক্রিয়াকে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া বলে। আবার, উৎপাদ পদার্থগুলো পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে বিক্রিয়কে পরিণত হয়, এই বিক্রিয়াকে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া বলে। বিক্রিয়ার শুরুতে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়ার হার অনেক বেশি থাকে। যতই সময় যেতে থাকে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়ার হার ততই কমতে থাকে।
আবার, বিক্রিয়ার শুরুতে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার হার কম থাকে। যতই সময় পার হয় পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার হার ততই বাড়তে থাকে। এক সময় সম্মুখবর্তী বিক্রিয়ায় হার এবং পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ায় হার সমান হয়ে যায়৷ এ অবস্থাকে উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা বলা হয়।
সাম্যাবস্থায় সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া এবং পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া চলতে থাকে, যে পরিমাণ বিক্রিয়ক সম্মুখবর্তী বিক্রিয়ায় উৎপাদে পরিণত হয়েছে, পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ায় উৎপাদ থেকে ঠিক সেই পরিমাণ বিক্রিয়ক উৎপন্ন হয়েছে (চিত্র 7.05)। কাজেই সাম্যাবস্থায় বাহ্যিকভাবে মনে হয় বিক্রিয়াটি বুঝি থেমে গেছে, কিন্তু বাস্তবে সেটি থেমে নেই। তবে সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়ার নিয়ামক তাপ, চাপ, ঘনমাত্রা এগুলো পরিবর্তন করলে সাম্যাবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে যায়। উভমুখী বিক্রিয়ায় সাম্যাবস্থায় উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস লা-শাতেলিয়ার নীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। লা-শাতেলিয়ার নীতিটি হচ্ছে:
কোনো বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় থাকাকালীন যদি তাপ, চাপ, ঘনমাত্রা ইত্যাদি পরিবর্তন করা হয় তবে সাম্যের অবস্থান এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যেন তাপ, চাপ, ঘনমাত্রা ইত্যাদির পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয়।
লা-শাতেলিয়ার নীতির ব্যাখ্যা
তাপ, চাপ কিংবা ঘনমাত্রার প্রভাবে সাম্যাবস্থার কী ধরনের পরিবর্তন হয় লা-শাতেলিয়ার নীতির মাধ্যমে সেটি খুব সহজে ব্যাখ্যা করা যায়।
সাম্যাবস্থার উপর তাপের প্রভাব একটি উভমুখী বিক্রিয়া বিবেচনা করা যাক:
N2 + 3H2 2NH3 + 92 kJ
এই বিক্রিয়ার সম্মুখমুখী অংশটি তাপ উৎপাদী, অর্থাৎ যখন N2 এবং H, বিক্রিয়ক তখন উৎপাদ NH3 উৎপন্ন হওয়ার সময় বিক্রিয়াটি তাপ উৎপাদন করে। এই বিক্রিয়ার বিপরীতমুখী অংশটি তাপহারী, অর্থাৎ NH, কে ভেঙে N2 এবং H2 উৎপন্ন করার সময় তাপ শোষিত হয়, কাজেই এর জন্য তাপ প্রয়োগ করতে হয়। আমরা এখন লা-শাতেলিয়ার নীতির ভিত্তিতে দেখতে চাই এই উভমুখী বিক্রিয়ায় তাপ প্রয়োগ করা হলে কী ঘটবে। লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুযায়ী তাপ প্রয়োগ করা হলে তাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত হতে হবে। তাপ প্রয়োগ করা হলে যদি সম্মুখমুখী তাপ উৎপাদী বিক্রিয়াটি বৃদ্ধি পায় তা হলে আরো বেশি তাপ উৎপাদিত হবে এবং ফলাফল প্রশমিত না হয়ে আরো বৃদ্ধি পাবে। যদি বিপরীতমুখী তাপহারী বিক্রিয়াটি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটি তাপ শোষণ করে তাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত করবে। কাজেই লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুযায়ী আমরা বলতে পারি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা হলে বিপরীতমুখী তাপহারী বিক্রিয়াটি বৃদ্ধি পাবে। অন্যভাবে বলা যায়, তাপোৎপাদী বিক্রিয়ায় তাপ প্রয়োগ করলে সাম্য ডান দিক থেকে বাম দিকে সরে যায় অর্থাৎ NH3, ভেঙে N2 ও H2 উৎপন্ন
করে।
একই যুক্তিতে আমরা বলতে পারি, বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় তাপমাত্রা হ্রাস করা হলে সম্মুখমুখী তাপ উৎপাদী বিক্রিয়াটি বৃদ্ধি পাবে এবং তাপ হ্রাসজনিত ফলাফল প্রশমিত করবে। অর্থাৎ সাম্য বাম দিক থেকে ডান দিকে সরে যাবে। যে সকল বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন হয় না সে সকল বিক্রিয়ায় সাম্যাবস্থার উপর তাপমাত্রার কোনো প্রভাব নেই।
এবারে আরেকটি বিক্রিয়া বিবেচনা করা যাক। এই বিক্রিয়ার সম্মুখমুখী অংশটি তাপহারী এবং বিপরীতমুখী অংশটি তাপ উৎপাদী।
N2 + O2 + 180 kJ 2NO
এই বিক্রিয়ায় তাপ প্রয়োগ করা হলে সম্মুখমুখী তাপহারী বিক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে, কিংবা সাম্য বাম দিক থেকে ডান দিকে সরে যাবে অর্থাৎ N2 ও O2 বিক্রিয়া করে NO উৎপন্ন হবে। আবার, সাম্যাবস্থায় তাপমাত্রা হ্রাস করা হলে বিপরীতমুখী তাপ উৎপাদী বিক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ সাম্য ডান দিক থেকে বাম দিকে সরে যাবে অর্থাৎ NO ভেঙে N2 এবং O, উৎপন্ন হবে।
সাম্যাবস্থার উপর চাপের প্রভাব
যে সকল বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মধ্যে যেকোনো একটি গ্যাসীয় বা সবই গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে সেসব বিক্রিয়ায় সাম্যাবস্থার উপর চাপের প্রভাব থাকে। সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা এবং উৎপাদের মোট মোল সংখ্যার পরিবর্তন হলে সাম্যাবস্থার উপর চাপের প্রভাব থাকবে। যেমন:
N2 (g) + 3H2 (g) 2NH3 (g)
লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুসারে সাম্যাবস্থায় চাপ প্রয়োগ করা হলে চাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত হতে হবে। একই আয়তনে গ্যসের মোল সংখ্যা বেশি হলে চাপ বেশি হয় এবং মোল সংখ্যা কম হলে চাপ কম হয়। উপরের উভমুখী বিক্রিয়ায় বাম দিকে গ্যাসীয় উৎপাদে মোল সংখ্যা বেশি (1+3 = 4) এবং ডান দিকে কম (2)। কাজেই চাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত করার জন্য বিক্রিয়াটির গ্যাসীয় উপাদান বেশি মোল থেকে কম মোলের দিকে যেতে হবে। অর্থাৎ বিক্রিয়ার সম্মুখমুখী অংশটি বৃদ্ধি পেয়ে N2 ও H2 বিক্রিয়া করে NH3 উৎপন্ন করবে। অন্যভাবে বলতে পারি, বেশি মোল থেকে কম মোলের দিকে সাম্য সরে যাবে। কাজেই সাম্যাবস্থায় চাপ কমিয়ে দিলে লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুসারে চাপ হ্রাসজনিত ফলাফল প্রশমিত করার জন্য বা চাপ বাড়ানোর জন্য কম মোল থেকে বেশি মোলের দিকে সাম্য সরে যাবে।
আমরা আরো একটি উভমুখী বিক্রিয়া বিবেচনা করতে পারি:
N2(g) + O2(g) 2NO(g)
এই বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক এর মোট মোল সংখ্যা 1 + 1 = 2 এবং উৎপাদের মোল সংখ্যাও 2, অর্থাৎ এই বিক্রিয়ায় মোলের পরিবর্তন হয় না, কাজেই চাপেরও পরিবর্তন হয় না। অন্যভাবে বলতে পারি, এই বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় চাপের কোনো প্রভাব নেই।
সাম্যাবস্থার উপর ঘনমাত্রার প্রভাব
সকল বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থার উপর বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার প্রভাব রয়েছে। বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় যে কোনো একটি বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বাড়ালে লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুসারে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা কমিয়ে পরিবর্তনের ফলাফলকে প্রশমিত করার জন্য উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে হবে। আমরা বলতে পারি, এখানে বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা ডান দিকে অগ্রসর হয়। একইভাবে বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় যেকোনো একটি উৎপাদের ঘনমাত্রা বাড়ানো হলে উৎপাদের পরিমাণ কমানোর জন্য বিক্রিয়াটি বিপরীত দিকে ঘটতে থাকে এবং বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি হতে থাকে। অন্যভাবে বলতে পারি, সাম্যাকথা বাম দিকে অগ্রসর হয়।
Read more